সোমবার, ২০ জুলাই, ২০২০

জন্মদিন


জন্মদিন
সন্দীপ কুমার মণ্ডল 




     ডিনার শেষ করে অবধি তার একটাই ভাবনা, কখন বারোটা বাজবে অপেক্ষার প্রহর যেন কাটতে কাটে না প্রতি পনেরো মিনিট অন্তর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচ মিনিট হলো মাত্র কখনো ভাবে একটু শুয়ে থাকি, ঠিক বারোটায় ফোন করবো কিন্তু সে অভয় পেল না এমন আগে অনেকবার হয়েছে একটু শুই ভেবে ঘুম ভেঙেছে একেবারে সকালে আফসোস নিয়ে বিছানা ছাড়তে হয়েছে তাই বসেই আছে সুপ্রিয় কবিতার বইটা সামনে খোলাই আছে একটা লাইন মাথায় ঢুকছে না চরম এক অস্থিরতা সবার প্রথম উইশটা সে' করবে, ঠিক বারোটায়
- মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অব দ্য ডে, হ্যাপি বার্থ ডে
- থ্যাংক ইউ সো মাচ হানি যাও এবার ঘুমিয়ে পড়ো
ফোন রাখতে ইচ্ছা না থাকলেও রেখেই দিল সে এর পর ওর কাছে আরও অনেক ফোন আসবে বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাই উইশ করবে এমন বিশেষ দিনে ফোন ওয়েটিং রেখে শুভেচ্ছাগুলো থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয় এমনিতে প্রতিদিন কথা হয় বাকীদের সাথে তো প্রতিদিন কথা হয় না নিশ্চয়ই সুপ্রিয়কে অনেকটা স্পেস দিয়েছে বনানী, সেটাই বা কম কি! তাছাড়া কাল সাত সকালে উঠতেও হবে

     ঘুমাও বললেই কি আর ঘুম হয়! যেন এক অনন্ত অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে তার রাত পোহালেই বনানীর সাথে দেখা হবে মনে মনে চেনা জানা হয়ে গেছে অনেকদিন আগেই, এখন শুধু চাক্ষুষ করার অপেক্ষা আগে যতবার দেখা করার ব্যাপারে কথা হয়েছে, ততবার বনানী বলেছে দেখা তো হবেই, তবে বিশেষ দিনে, বিশেষ মূহুর্তে রাত পেরোলেই সেই বিশেষ দিন বিছানায় এপাশ ওপাশ করে চলেছে প্রিয় ঘুম নেই ঘুম নেই বিকাল থেকেই সমস্ত জামা প্যাণ্টের মধ্যে থেকে বেছে বেছে জিন্সের প্যান্টটাকেই পছন্দ করে রেখেছে, সাথে নীল টি-শার্ট নীল রঙ বনানীর পছন্দের সে কথা জানে প্রিয়

     সকাল হতেই বেরিয়ে পরেছে প্রিয় অনেকটা পথ যেতে হবে সারাদিন বনানীর ফ্ল্যাটে একসাথে কাটাবার প্ল্যান আছে তাদের যতটা তাড়াতাড়ি পৌঁছানো যায় ততটাই বেশী সময় কাছে পাওয়া, সাথে থাকা প্রাথমিক গন্তব্য ট্রেনে হাওড়া স্টেশন তারপর বনানীর দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী পথ পুরো মনের ভিতর ছবি একে নিয়েছে কলকাতা প্রিয়র একেবারে অচেনা না হলেও খুব চেনাও নয় অসুবিধা হলে ফোন করে নিতে বলেছে কিন্তু প্রিয় ঠিক করেছে ফোন করবে না, একেবারে দরজায় গিয়ে কলিং বেল টিপবে চমকে দেবে বনানীকে
জানালার বাইরে চোখ রাখলো প্রিয় আহা কি সুন্দর সবুজ কচি ধান ক্ষেত যেন সবটুকু সবুজ মেখে শুয়ে শিশুর মতো হাসছে নয়ানজুলিতে বেগুনী কচুরিপানার ফুল যেন সবে ঘুম ভেঙে তাকিয়েছে আকাশ হালকা লাজুক লাল, সবাই যেন প্রিয়র উত্তেজনায় সামিল ভোরে বা সাত সকালে আগেও বহুবার এখান সেখান গেছে সে, কিন্তু এমন করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে নি সে

      ওই তো রয়েল রেসিডেন্সি অটো থেকে নেমে পড়লো প্রিয় ব্যাগটা পিঠে নিয়ে নিল, জন্মদিনের উপহার এর মধ্যেই আপাতত গচ্ছিত আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা, তারপরেই উপহার তার মালকিন খুঁজে পাবে হাতের গোলাপটার দিকে তাকিয়ে দেখলো, তাকেও লাজুক মনে হল প্রিয়র ঠোঁটের কোনে হালকা হাসি, এদিকে ইনসুলিনের ক্ষরণ বেড়েই চলেছে, বুকের ধড়ফড়ানি বাড়ছে
- দাদা, রেবতী টাওয়ারটা কোনদিকে?
হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিল সিকিউরিটি মনে মনে আওড়াতে লাগলো সেকেন্ড ফ্লোর, টু বাই

     কলিংবেলে হাতে দিতে গিয়ে প্রিয় টের পেল তার হাত রীতিমত কাঁপছে ভিতরে একটা মেয়ে, তার এতদিনের ইচ্ছার সাথে এখন শুধু একটা মাত্র দরজার দূরত্ব দরজা খুলতেই তার পায়ের কাছে এক হাঁটু মুড়ে বসবে প্রিয় হাতের গোলাপটা দু'হাতে বাড়িয়ে দেবে তার দিকে জন্মদিনের উইশের সাথে প্রেম প্রোপোজটাও আজই করবে
- কাকে চান?
চোখের সামনে এক মধ্য পঞ্চাশ ভদ্রলোক পোশাক দেখে মনে হচ্ছে কোথাও বেরোবেন এখনই
- বনানী.....
হাতের গোলাপ লুকিয়ে ফেলেছে প্রিয়, কথা তুতলে যাচ্ছে তার, গলাটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে
- ওই নামে এই বাড়িতে কেউ থাকে না
তা কি করে হয়? এই ঠিকানাই তো বলেছিল নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার আবার অবিশ্বাসই বা করবে কি করে? সে তো একা ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে বলেছিল, তবে এনারা কারা? সে কি তবে ঠিকানা ভুল করলো? না, তা তো করেনি
- কে গো? এই বেরোনোর সময় কে এলো?
ভিতর থেকে এক মধ্যবয়সী মহিলা জিজ্ঞেস করলেন বোধহয় ওই ভদ্রলোককে উদ্দেশ্য করেই
আওয়াজ পেয়ে ভিতরে তাকালো প্রিয়, ফ্ল্যাটের দরজা খুললেই ডাইনিংটা ওপেন হয়ে যায় মেঝে জুড়ে ছড়ানো ছিটানো ফুলের তোড়া, গিফটের র‍্যাপার, বিয়ারের বোতল

ব্যাগ থেকে গিফটের প্যাকেট আর গোলাপটা ভদ্রলোকের হাতে গুঁজে দিয়ে নিচে নেমে এলো প্রিয় বনানীর ফোন লাগছে না 



মায়াজম ব্লগজিন জানুয়ারী ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন