সকাল হতে না হতেই আত্মারাম
খাঁচা ছেড়ে বেড়িয়ে পড়লো। এখনো কেউ ঘুম থেকেই ওঠেনি, বৌ আজ একটু বেলা পর্যন্ত
ঘুমালেও কারো কিছু বলার নেই। কেউ আর চা দাও চা দাও বলে চিল্লাবে না। ওদিকে সদর
দরজাটাও বন্ধ। অন্যদিন হলে নিজেই চাবিকাঠিটা নিয়ে সদর দরজা খুলে মাইল দুই হেঁটে
রাস্তার মোড়ে ভানুদার দোকানে চা খেয়ে সিগারেটটা টানতে টানতে বাড়ি ফিরতাম, আজও সেই
নিয়মে চাবিকাঠিটা হাতে নিতে গিয়ে প্রথম টের পেলুম আমি মরে গেছি, আর ওটা লোহা - তাই ছুঁতেই পারলুম না, যেন ইলেকট্রিক শক মারার
মতো আমার হাতটা ছিটকে এলো।
কি আর করি উঠোনেই পায়চারি
করতে লাগলুম। হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আচ্ছা আমি তো ভুত, আমার আবার দরজা খোলার জন্য
চাবিকাঠি কি দরকার! আমি তো এখন ভুতের রাজার বংশধর আর পদাধিকার বলে যেথায় খুশি যাইতে
পারার জন্য ভুতের রাজার দেওয়া বরের দরকার পড়ে না। অনায়াসেই ভানুদার কাছে গিয়ে একটা
টোস্ট বিস্কুটের সাথে এককাপ চা একটা সিগারেট অনায়াসেই সাঁটিয়ে দিয়ে আসতে পারি। তার
জন্য পয়সাও লাগবে না। তবে ভয় একটাই। মা আমাকে নিতে আসছে, আর এসে যদি আমার মুখে
সিগারেটের গন্ধ পায় – উত্তম মধ্যম বসিয়ে দেবে, মরে গেছি বলেও খাতির করবে না।
তবে আপাতত আর বাইরে যেতে ইচ্ছে
করছে না। বরং ওই পেয়ারা গাছটায়
বসে সবার রঙ্গ দেখি। মায়ের তো অনেকক্ষন আগেই
আসার কথা, এখনো তো এলো না। আর মায়েরই বা দোষ কি! আজকাল আকাশেও
ট্রাফিক সিগন্যাল বসেছে বোধহয়। যা সব প্লেন, হেলিকপ্টারের দৌরাত্ম বেড়েছে ! এখন আবার নতুন করে যোগ হয়েছে স্যাটেলাইট, নতুন গ্রহে
যাবার রকেট । মা যে এই বৃদ্ধ বয়েসে
এতদূর থেকে আমাকে নিতে আসবেন এটাই বড় কথা। অবশ্য আমি একাও চলে যেতে পারতাম, কিন্তু যমরাজের
এটাই নাকি নিয়ম। আপনজন কাউকে এসে হাত ধরে
নিয়ে যেতে হয়। অগত্যা মায়ের কপালেই কষ্টটা
নাচলো। যখন আসবে আসুক, আমি ততক্ষন চারপাশটা
একটু ঘুরে দেখে নিই। আর তো দেখার সুযোগ পাবো
না। আমার তো ভবলীলা সাঙ্গ।
গাছ থেকে একটা পেয়ারা পেরে
বসালাম এককামড়। সকালে চায়ের বদলে পেয়ারাই
হোক। উপস। কি শক্ত। দাঁতটা নড়ে গেল যেন। এখনো কাঁচা। ভোরের আলোয় বুঝতেই পারিনি
মালটা… থুড়ি পেয়ারাটা এখনো পাকে নি। ফুঃ ফুঃ করে ঘাড় ঘুরিয়ে ছিবড়ে গুলো বাইরের দিকে ফেলতে গিয়ে নজর
পড়লো পুকুর ঘাটে পাশের বাড়ির বৌদি। দারুন সুন্দরী, তার থেকেও বেশী
আকর্ষণীয় স্বাস্থ্য। পরনে একটা গোলাপি রঙের
নাইটি , মনে হচ্ছে যেন পুঁটুলিতে ভরা ছিল। সাতসকালে পুকুরে আসার
অছিলায় লোকটাকে আলো ফোটার আগেই বাড়ি থেকে বের করে দিল।
ওরে শ্লা… ! তলে তলে এতো ! বেচারা বৌদি। দাদা আর্মিতে ছিলেন , অকালে বৌটাকে
বিধবা করে নিজে স্বর্গবাস করছেন। ব্যাপারটা কানাঘুষো শুনেছিলাম আগে ওই ভানুদার দোকানেই। আজ মরে গিয়ে স্বচক্ষে দেখালাম। উপরে গিয়ে আর্মি দাদাকে ব্যাপারটা
জানাতে হবে। কিচ্ছু না। ওই দু-একদিন একটু ভুতের
ভয় দেখিয়ে দিলেই কোনো ছেলে আর ওই বাড়ির দিক মারাবে না।
ওওওওহহহ! বাবারে...... ! থুড়ি
থুড়ি...... ভুতরে ! এইভাবে বুকের উপর আচমকা কেউ লাফায় !
ওওও রানীমার ঘুম ভেঙেছে তাহলে... আর ঘুম থেকে উঠেই ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়েছে আমার
বুকে।
আহা! কি সোহাগের কান্নারে। মা আমার... কাঁদছো কাঁদো, কিন্তু হাতেও লোহাটা একটু
সামলে। পাঁজরে বড্ড লাগছে। আর ভুতেরদের এমনিতেই লোহাতে ইলেকট্রিক শক লাগে। মরে
গেছি বলে কি মানুষ নই! ওই লোহার ধাক্কাটা ছাড়া বাকি সব ভালো লাগছে অবশ্য।
আচ্ছা, উনি কি জানতেন আমি আজ
সকালেই টপকে যাবো! নাহলে সাতসকালে কোনরকম ডাকডাকি ছাড়াই একেবারে বুকের উপর সম্পাট
! নাকি আমি পাশের বাড়ির বৌদির লীলাখেলা দেখতে এতই মশগুল ছিলাম ওনার ডাকটা আমার
কানে এসে পৌঁছায়নি। কতক্ষন আর কাঁদবে! বৌটা আমার শান্ত হয়েছে। এখন ওনার অনেক কাজ ।
সব জায়গায় খবর টবর দিতে হবে, বিশেষ করে দুই দাদাকে মানে আমার দুই শালাকে। পারলে
এক্ষুনি উড়ে চলে আসুক। ইন্সুরেন্সের কাগজগুলো কোথায় আছে খুঁজে টুজে দেখতে হবে। ফিক্সড
ডিপোসিট কিছু ছিল কি? হতচ্ছাড়া লোকটা কিছু বলেও না। দেখিয়েও রাখে না।
কিন্তু সবই তো হলো, আমার
লীলাবৌদি এখনও আসছে না কেন! এই বাড়িতে এতো কান্নাকাটি কিছুই কি সে শুনতে পাচ্ছে
না! আরে কেউ একজন সদর দরজাটা খুলে দে না রে, বেলা দুপুর হয়ে গেল যে!
ভাবতে ভাবতে এসে পড়েছেন, আর
এসেই ঝপাং... একেবারে বুকের উপর... আহা... আহা... কি ভালো... কি ভালো। লীলা বৌদির একটা
সুবিধা, ওনার হাতে কোন লোহা, বালা, চুড়ি কিছু নেই। খুব ইচ্ছে করছে...... থাক... কি
ইচ্ছে করছে সেটা আর সবার সামনে নাই বা বললুম...... শুধু শরীরের দুপাশে কলার থোরের
মতো পড়ে থাকা হাত দুটোর কষ্টটা দূর করতে পারলুম না। আমি তো ভুত! ওই পড়ে থাকা
শরীরটার উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রন নেই। তবুও বেশ ভালো লাগছে। মরে গিয়েও এত সুখ আগে
জানলে কবেই মরে যেতুম।
- -- সুখ পাওয়াচ্ছি তোকে... হতচ্ছাড়া... নেমে আয় গাছ থেকে...
এইটুকু একটা পুঁচকে গাছে এতবড় ধাড়ি একটা ছেলে সাতসকালে চেপে বসে থাকাচ্ছি... নাম
তুই। এতদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাঁটতিস, এখন আবার দেখছি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গাছেও উঠে পড়ছিস।
চোখ কচলে দেখি মা আমার দেড় ফুটিয়া কাঠের স্কেলটা হাতে নিয়ে গাছের নীচে
দাঁড়িয়ে।
যাঃ ত্তেরি..... !
বাহ বেশ লিখেছো তো
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
মুছুন❤
মুছুনদারুণ দারুণ😊😘
উত্তরমুছুন❤
মুছুনআহা দারুণ লাগলো .. বেশ অন্যরকম লেখা .. 👏👏💐💐
উত্তরমুছুন💐💐
মুছুনBa khub valo laglo
উত্তরমুছুন😊😊
মুছুন