সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২

কোলাহলমুক্ত এক জার্নি

 


সোনালী জানা
দুর্গাপুর
শিক্ষিকা
 
    মনে রাখার মতো একটি বই পড়লাম। "নিজস্ব অভিমুখে ফিরে "

   -হ্যাঁ, অন্তকরণের খোলা জায়গায় গিয়ে একান্ত ভাবে নিজের সাথেই বসা।       কোলাহলমুক্ত,কোনো তাড়াহুড়ো নেই। কেবল শান্ত হয়ে ধীরে ধীরে           রসাস্বাদন।

    একটানা খুব বেশি নয়,একটু করে জিরিয়ে নিতে হয় কবিতার কাছে।   একদিকে ভাবের জগৎ আর অন্যদিকে বাস্তব। তারা যখন দুটো বিপরীত     চিত্র এঁকে যাচ্ছে, তখন পাঠককে মাঝে বসতে হয় হাতে আয়না নিয়ে। কী   দেখবো তাতে? সেটা কবি বলেননি।পাঠকের জন্যই ছেড়ে দিয়েছেন।

    আমার মনে হয়,গভীর জীবনবোধ, হৃদয় নিঙড়ানো উপলব্ধি না থাকলে   বোধহয় এমন কবিতা লেখা সম্ভব নয়। ছত্রে ছত্রে ব্যাঞ্জনা, চিত্রকল্প   আমাদের দূর থেকে দূরে নিয়ে যায় অনায়াসে। সেই জার্নিতে হোঁচট আছে,  আঘাত আছে। তবে লক্ষ্যে পৌঁছে গেলে অনাবিল আনন্দস্রোতে কেবলই ভেসে থাকার আনন্দ।

    বহু কবিতার বইয়ের মাঝে একটি আলাদা স্বাদের বই। এতো নিটোল আধুনিক গদ্যকবিতা উপহার দেওয়ার জন্য কবিকে ধন্যবাদ, শ্রদ্ধা জানাই ... 


প্রকাশক - বার্ণিক প্রকাশন

মুদ্রিত মূল্য - ১২০্‌ টাকা (ভারতীয়) 



শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

যেদিন গেছে মকরস্নানে

           পাশের গ্রামের বুলিমাসি, বুলি পোড়েল। আমার মায়ের গুগলি, সজনেফুল, কলমিশাকের যোগানদার। শুধু এইটুকু বললে ভুল হবে। সময়ে অসময়ে এসে মায়ের সাথে আড্ডা গল্পেরও সঙ্গী। কখনও এসে বলত, “ডাক্তারগিন্নি দু’সের চাল দাও না, কাজ করে শোধ দিয়ে দেব”। কিন্তু মা’কে কোনোদিন কাজ করিয়ে সেই দু’সের চাল শোধের কথা বলতে শুনিনি। সম্পর্ক ছিল এইরকমই। কিন্তু সেই বুলিমাসির সাথে আজকের বুলিমাসিকে মেলালে ভুল হবে। আজ বুলিমাসির অন্যরূপ। আমাদের বাড়ির মাটির পাঁচিলের ভিতর পরপর তিনটে নারকেল গাছ ছিল। সেই পাঁচিলের পাশ দিয়েই নদী নাইতে যাচ্ছে বুলিমাসি তার সঙ্গীসাথীদের নিয়ে। চলেছে মকরস্নানে। বগলদাবা একটা নাইলন থলিতে সম্ভবত কাপড়চোপড়। বুলিমাসি মা’কে উদ্দেশ্য করে সুর করে বুলি কাটছে… 
 “বাড়ির ভিতর নারকেল গাছ
 সামলে থাকিস ডাক্তারগিন্নি লো
 তোর বরের যে মাথায় টাক” 
             সে গানের অদ্ভুত নেশা লাগানো সুর, শুনলে শুনতেই ইচ্ছে করে। আর সেই গানের লিরিকে হেসে খুন হতে হয়। ওরা বলে টুসু পরব। টুসু গানের আসল সুর কী, সে জানি না, কিন্তু জন্মাবধি এই বিশেষদিনে এই একসুরে গান শুনে এসেছি। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, বছর পাঁচেক আগেও দেখেছি। বাবুদের বাড়ির মনুকাকা শুধুমাত্র এই মজাটা পুরোমাত্রায় নেবার জন্যই পাড়ার সাঁকোতে বসে থাকত। তার কাজই ছিল, যারা গাইছে তাদেরকে উসকে দেওয়া, কারন এ তো সবাই জানি, উসকে দিলেই আগুন বেড়ে যায়। বুলিমাসিকে যেরকম সম্পর্কে আমি মাসি ডাকি, মনুকাকাও বৌদি ডাকে, সে সম্পর্কের ইতিবৃত্ত আমি জানি না। তবে রেগে গেলে যে কে কার মাসি বা বৌদি সে হিসেব কে কবে করেছে! রাগিয়ে দেবার জন্যই মনুকাকা তার বাঁহাতটা কোমরে রেখে, সামনে অল্প ঝুঁকে ডান হাতটা সামনে বাড়িয়ে বুলিমাসির কোমরের থলিটাকে ইঙ্গিত করে গেয়ে উঠল।
“তোর থলিতে কি আছে 
 বাবলা গাছে উই ধরেছে লো 
 রস ধরেছে খেজুর গাছে” 
                             খেজুর গাছ বলার সময় পাশের মেয়েটির দিকে হাত দেখাল মনুকাকা। ব্যস, আর যায় কোথায়! বুলিমাসিকে বাবলাগাছ বলা! জবাবও রেডি, 
“অঘান মাস কি ভুলে গেলি 
এই বাবলা গাছের ডাল ধরে লো 
 কাঁটা বিঁদে ঘর গেলি” 



             কাল সারারাত পাড়ায় পাড়ায় চলেছে কাঁচা মদ আর মাংসের সাথে বোল কাটাকাটি। পুব দিকের বাগদিপাড়ার সাথে দক্ষিনের মাজিপাড়ার লড়াই। কখন কোন গানের ছুতনো খুঁজে নিয়ে বাউরিপাড়াও এন্ট্রি নিয়ে নিয়েছে সে লড়াইয়ে। ছোটখাটো পেছনেলাগা যেটাকে আজকের দিনে লেগপুলিং বলে সম্ভবত সেসব থেকে একেবারে ব্যক্তিগত কেচ্ছাও ভেসে আসত সুরে সুরে। সেই আক্রমনে বাদ যেত না কেউ। বাবুদের বাড়ি কোন ছেলে কাজের নামে ঘরে ডেকেছিল কোন ছেমড়িকে, নয়তো দোলের দিনে রায়বাড়ির মোরে ছেলেটা রঙ মাখাবার বাহানায় কোন মেয়ের বুকে হাত দিয়েছে। কোন বাড়িতে কাজে গেলে মাইনে কম দেয়, কোন মুদির দোকানে জিনিসের দাম বেশি নেয় সে সবই যেন সারা গ্রামের জানা হয়ে যেত এক রাতেই। 
            আসলে প্রতিদিনের যাপনটাই উঠে আসত। যে জীবনটা তারা সারা বছর ধরে যাপন করে, তারই যেন বহিপ্রকাশ ঘটে এই মকরপরবে। হয়তো পুষে রাখা যন্ত্রণাও। সেই মুহূর্তে মুখের সামনে প্রতিবাদ করতে না পারার রাগটাও যেন এখন বেরিয়ে আসে। 

             আজ রাস্তায় শুধু ছই সাজানো গরুর গাড়ি, গরু দুটোর গলায় গাঁদার মালা, সাথে ঘণ্টা বাঁধা টুংটুং বাজছে। আজ পুরো রাস্তা তাদেরই। “রাস্তা কারও একার নয়” বললে আজ আড়ংধোলাইও জুটতে পারে। তাই ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়া আজ বাস সহ সমস্ত যানবাহন বন্ধ। শেষ কয়েক বছর আবার গরুর গাড়ির জায়গাটা দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর। 
            
নিশিজাগরনের পর আজ সকালে মকরস্নান। বয়স্ক কিছু মহিলা অবশ্য ভোর ভোর সে স্নান সেরে এসেছে। কিন্তু সে সংখ্যা খুবই নগন্য। দলবেঁধে দামোদরে স্নান। আর তাদের যাত্রাপথের সঙ্গী এই টুসুগান। দুপাশে যা দেখে, যা ঘটে তাই বসে যায় তাদের সুরে সুরে। কখনও গানে ইঙ্গিতে সস্তা চটুলতাও ধরা পরে। ছই লাগানো গরুর গাড়িতে পিছন দিকে মুখ করে বসা একদল মেয়ে হঠাৎ গেয়ে উঠল
 “সাইকেল চালাবি সাবধানে 
এদিক ওদিক তাকাস যদি লো 
ধাক্কা লাগবে পাষাণে” 
 সাথে সাথে পিছনে সাইকেল ঠেলে নিয়ে যাওয়া ছেলের দল থেকে উত্তরও এল 
 “তোর পেয়ারার জাত ভাল 
এমন বাগানে না তাকাই যদি লো 
 বাগান মালির মুখ কালো” 


                 পেরিয়ে যাচ্ছি এইসব অনাবিল আনন্দের দিনগুলো। আমি নিজেও ‘রাত জাগরনের’ রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে, রাস্তায় বাইক রেখে, সাঁওতাল ছেলেমেয়েগুলোর সাথে মাদলের তালে তালে পা মিলিয়ে নেচে খেজুর গুড় দিয়ে পিঠে খেয়ে বাড়ি ফিরেছি রাত করে। তারাও নিবিড় আনন্দে কাছে টেনে নিয়েছে। 

                পৌষ সংক্রান্তিতে অনেক গ্রামেই মেলা বসে। আমার গ্রামেও বসত পঞ্চগ্রামী মেলা। সে যেন ছ-সাতদিন ধরে পাঁচখানা গ্রাম জুড়ে হৈ হৈ। সারাক্ষন কানের কাছে পেঁ পোঁ বেজেই চলেছে। যাত্রা, সিনেমা, লেটো, আলকাপ, নাগরদোলা, সার্কাসে যেন দম ফেলার সময় ছিল না। সময়ের সাথে সাথে সেসব জৌলুষ কমতে কমতে যেন কবে তার প্রাণবায়ু বেরবে সেই অপেক্ষাই করছিল, আর সেখানেই চিতা সাজিয়ে দিল করোনা। গরুর গাড়ি, মাইক-বক্স বাঁধা ট্রাক্টরের হুল্লোড় নেই, কিন্তু আজও আমাদের গ্রামে এইদিনটাতে বাস চলে না। “রাস্তা কারও একার নয়”… রাস্তা আজ সবারই…

রবিবার, ৯ মে, ২০২১

স্বীকারোক্তি বাকি আছে আলোচক লোপামুদ্রা

লোপামুদ্রা
কলকাতা
কবি, IT Professional  

 ফেব্রুয়ারীতে লিটল ম‍্যাগাজিন মেলায় বার্ণিকের স্টল থেকে তোমার লেখা 'স্বীকারোক্তি বাকি আছে' বইটি সংগ্রহ করেছিলাম, আজ তা পড়া শেষ করলাম। তুমি আমার কাছে শুধুমাত্র একজন কবি নও, তুমি আমার সেই বন্ধু যে কলকাতা থেকে বর্ধমান লিটল ম‍্যাগাজিন মেলায় যাচ্ছি শুনে এসে ভালোবেসে আলাপ করেছিলে। তারপর থেকে সময়ে অসময়ে খোঁজ নিয়েছ। কথা হয়েছে আমাদের বহুবার, দেখা না হলেও। আমাদের বন্ধুত্বে দূরত্ব কখনো কথা বন্ধ করাতে পারেনি। এই বইয়ের মূল্য তাই অনেকখানি, বহু ভালো লাগা জড়িয়ে রয়েছে তোমার লেখা এই বইটায়। 

বর্ধমানে সেবার বার্ণিকের একটি কাব‍্যসংকলন সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম, আবার দ্বিতীয় বার বার্ণিকের স্টলে গেলাম তোমার বইটি নেব বলে। লেখক বন্ধু হলে আগ্রহ আরো বাড়ে। জানি তোমার মনে প্রশ্ন থাকবে চার মাস লাগল বইটি শেষ করতে! লাগল কারণ তোমার স্বীকারোক্তি তোমার একার ছিল না, প্রতিটি লাইন পড়তে গিয়ে অনেক কথাকে যেন ছুঁয়ে যেতে পেরেছি। বারবার তোমার বইয়ের পাতা ওল্টাতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছি, সময় নিয়েছি, আবার খুলে বসেছি কয়েকদিন পর। 

কত সহজে 'বিপ্লব' কবিতায় তুমি লিখে দিলে

'মেট্রোতে ঝাঁপ দেওয়া কি আর বড় কথা, শুধু মৃত‍্যুসংবাদটা তোমার কাছে পৌঁছে যাবে...তাই…' কত অনায়াসে তুমি লিখে দিলে কবি মৃত্যু বড় আপনার, কিন্তু প্রিয়জনকে ছেড়ে নয়..তাই এই দাঁড়িয়ে থাকা, তাই আমাদের এই অনন্ত অপেক্ষা হয়ত। অথচ বলা বড় ধৃষ্টতা মরণ রে তুহু মম শ‍্যাম সমান।

এরপর পাতা উল্টে দেখলাম তুমি লিখেছ 'স্পট-লাইট'। সেখানে লিখেছ- 

'স্মৃতি হাতড়ে গল্প আর কতদূর এগোনো যায়!  আমি চিত্রনাট‍্যকার নই, উদ্দেশ‍্যহীন হেঁটে বেড়াই স্টেজের প্রান্ত থেকে প্রান্তে'। আমরা সবাই চাই কবি নিজের মত চিত্রনাট্য সাজাতে, পারে কেউ, কেউ হার মানে। যারা পারে না তাদের সবার হয়ে তুমি বলে দিলে। সেজন্যই তুমি কবি, সেজন্যই এতটা সময় নেওয়া এর প্রতিটি বাক‍্য ছুঁয়ে যেতে যেতে। কত অনায়াসে লেখা কটি শব্দ তোমার, অথচ কি নিদারুণ সত‍্য, কি নিষ্ঠুর অসহায়তা মানুষের।

এরপর তোমার লেখা 'বাসস্টপ'। 'দাঁড়িয়ে আছি বাসস্ট্যান্ডে। আমাকে সাঁতার শেখাও বন‍্যা, ভাসতে শেখাও, বিদায়হীন আলিঙ্গন শেখাও'...তোমার সৃষ্টি করা প্রতিটি শব্দ ভিতর থেকে অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি বইটি পড়তে পড়তে বারবার। তোমার স্বীকারোক্তি সমূহ যতটা যন্ত্রণার, ততটাই সত্য ও সুন্দর। তাই তাকে নিজের মত করে বুঝতে কষ্ট হয়নি কবি। বইটিতে মোট ৬৪  টি পাতা, কিন্তু পড়তে তাই ৬৪ দিন আমার কাছে কম মনে হয়েছে, এক অসম্ভব ভালো লাগা মনকে ছুঁয়ে গেছে। তোমার সৃষ্টিরা পূর্ণতা পাক কবি, আরো নতুন বেদনা উচ্ছলিত হোক তোমার কলমে। কবি তো সবাই নয়, কেউ কেউ, যারা মানুষের কথা বলবে। তুমি তাই কর, নিজের সুখ পেরিয়ে মানুষের কথা লেখ কবি। আরো লেখ, আরো নতুন বই বেরোক বন্ধু, অপেক্ষায় থাকলাম। 

ভালো থেক কবি। ভালো থাকুক তোমার কবিতারা।

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০

স্বীকারোক্তি বাকি আছে আলোচক শ্রাবণী খাটুয়া (কৃষ্ণকলি)

শ্রাবণী খাটুয়া (কৃষ্ণকলি)
শিক্ষিকা
সারেঙ্গা, বাঁকুড়া 

 স্বপ্ন ও বাস্তবতার মাঝখানে কঠিন জমি

"বুকের ভিতর কিছু একটা ডানা ঝাপটায়, অথচ আমরা কেউই পাখি হতে পারছি না।"

“আমাকে ওই যজ্ঞ ডুমুরের মতো হতে হবে । অনুভূতিহীন, আত্মমগ্ন, ধ্যানস্থ ।"

নাহ্, কথাগুলো আমার নয় অথচ ভীষনভাবেই আমার । আসলে কথাগুলো কবি সন্দীপ কুমার মণ্ডল তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ  “স্বীকারোক্তি বাকি আছে" তে বলেছেন ।

আমাদের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখা কিছু অনুচ্চারিত শব্দরাশি, যা কখনো বলা হয়নাবলা যায়না, সেসব কথাই যেন গোপন স্বীকারোক্তির মতো প্রকাশ পেয়েছে কবির লেখায়। চেনা পদ্য ছন্দের বাইরে গিয়ে গদ্য ও কবিতার মাঝামাঝি  এক স্বতন্ত্র লিখনশৈলীতে কবি তার অন্তরের আবেগ ফুটিয়ে তুলেছেন।  যে আবেগ পাঠক হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় খুব সহজেই।  তার এক একটি লেখা যেন অভিমানী প্রেমিক মনের লুকিয়ে লেখা গোপন ডায়রির পাতা।  কবির কথায়, "নিঃসঙ্গতা আসলে কিছু স্মৃতি, কিছুটা সময়, কিছুটা দূরত্ব।”যে দূরত্বে চেপে কবির সাথে আমরা পাঠকও পৌঁছে যাই  “নশ্বর ফেরিঘাটে।  যেখানে ঢেউয়ে ঢেউয়ে চকচক করছে ফেলে আসা সময়, সময়ের গা জুড়ে আবিল স্মৃতির ঘ্রাণ, যে ঘ্রাণে কোনো নৌকা বুক পাতেনি উজান টানে।”

কখনো বা শব্দ সেতুর পথ বেয়ে পৌঁছে যাই স্বপ্ন ও বাস্তবতার মাঝখানে সেই কঠিন জমিটাতে যেখানে দাঁড়িয়ে জীবনের ঘাত প্রতিঘাত চড়াই উৎরাইয়ের কথা লিখতে গিয়ে কবি বলেছেন - "কেন  লিখতে এসেছিলাম ! কবিতা, গদ্যের আলাদা কোনো সংজ্ঞা আমি মানিনা। ......... তবে কেন লিখছি! এই সময়টা ডাটা এন্ট্রি করলে দু - পয়সা অতিরিক্ত আয় হত। ব্যস্ততায় ডুবিয়ে ফেলি নিজেকে।” অথবা “নায়ক অথবা খলনায়ক, শেষ দৃশ্যে মৃত্যু অনিবার্য। শুধু মৃত্যু দাগ বুকে নিয়ে গঙ্গাটা পেরিয়ে আসাটাই চ্যালেঞ্জ”।

"প্রতিটি ভেঙে পড়াই আসলে একেকটা বেঁচে থাকার প্রতিফলন, প্রতিটি মৃত্যুই আসলে একেকটা এফিটফের অজুহাত । ........ আসলে আমি মরতে ভয় পাই বলেই বেঁচে নেই ।"

 আমি এক সামান্য পাঠক। কবিতার চুলচেরা বিশ্লষণ করা আমার সাধ্যের বাইরে, কীভাবে পাঠ প্রতিক্রিয়া দিতে হয় তাও জানিনা তবে আমি চেষ্টা করি কবিতার মধ্যে কবির অনুভূতিটুকু ছুঁয়ে দেখার আর নিজের ভালোলাগাটা সকলের সাথে ভাগ করে নিতে কার না ভালোলাগে বলুন! এখানে আমি শুধু আমার ভালোলাগাটা সকলের সাথে ভাগ করে নিলাম । তবে আমার মনেহয় সৃষ্টি যখন স্রষ্টার পাঁজরের সীমা অতিক্রম করে পাঠকের মনের কথা হয়ে ওঠে তার হৃদয় ছুঁয়ে যেতে সক্ষম হয় সেখানেই সৃষ্টির আসল সার্থকতা।  কবি সন্দীপ কুমার মণ্ডলের সৃষ্টি সেদিক থেকে সার্থক এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ।

আপনারা বইটি পড়ে দেখতে পারেন, আশাকরি খারাপ লাগবে না ।

সবশেষে কবি বন্ধুর জন্য রইলো আমার আন্তরিক শুভকামনা ও এক আকাশ ভালোবাসা।  তুমি আরো লিখতে থাকো বন্ধু ... আপনমনে সকলের মনের কথা

 কিছু ভালোলাগা লাইন *

"মেট্রোতে ঝাঁপ দেওয়া কি আর বড় কথা, শুধু মৃত্যু সংবাদটা তোমার কাছে পৌঁছে যাবে ... তাই...”(বিপ্লব)

"যে কথাটা লেবু ফুলের বাসের মতো বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি অথচ বলতে পারছি না, ভালো থাকাটা হৃদয়ের কাছে একটা বিশেষ সংবাদ মাত্র।"(হাইবারনেশন)

"আসলে আমরা কেউ কাউকে ভুলিনা -- শুধু মনে রাখার ধরনটা বদলে যায় ..."(বড়দিন)

"নগ্ন নির্জন নিজস্বতায় স্বেচ্ছাচারী জ্যোৎস্নার তীর ধরে হেঁটে গেছি শুধু আর ভীষ্মের মতো অপেক্ষা করেছি একটা উওরায়ণের।”(ইউথেনেসিয়া)

"প্রতিটি নীরবতা আসলে যন্ত্রনার অভিজ্ঞতায় গড়া। প্রতিটি যন্ত্রণা ছায়া ছায়া গাছেদের মাথায় ইস্পাত রঙে জমতে থাকলে আমার এসরাজে মল্লার বেজে ওঠে।"(বিশল্যকরণী)

"যেকোনো ডিপ্রেশনের দেশে বৃষ্টিরা মহানুভব হয়।"(জল - ডুব)

"ঘুলঘুলি বেয়ে পয়গম্বর নেমে এলে পেরিস্কোপ ছাড়াই দৃশ্যমান ঢেউ ডিঙানো মাস্তুল।  অথচ ধারালো ব্লেডের আঁচড়গুলো তোমার হাতে ঢেউয়ের দাগ হয়ে ফুটে আছে "(সমুদ্রস্নান)


কবি সন্দীপ কুমার মণ্ডল

প্রকাশক বার্ণিক প্রকাশন, বর্ধমান

প্রচ্ছদ সেঁজুতি বন্দোপাধ্যায়

মুদ্রিত মূল্য - ১২০ টাকা (ভারতীয়) 

বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০

শ্রাবণের শেষ সোমবার

 অন্যদিনের মতোই কাজে বেরিয়েছি। ও মা! রাস্তায় এ তো দেখি জনসমুদ্র। আশেপাশের এগারোটা গ্রাম থেকে হলুদ হলুদ কয়েকদল নরনারী নদীর দিকে চলেছে। দূর থেকে গাঁদা ফুলের জমি যেমন দেখতে লাগে ওইরকম। শুধু হলুদ আর হলুদ। 

রাস্তায় উঠতেই চমকে গেলাম। আমার কানের ভিতর তখন উড়োজাহাজের আওয়াজের মতো একটা গোঙানি গোঁ গোঁ করছে। নিজের বাইকের আওয়াজটাও শুনতে পাচ্ছি না। সামনে নাটকের ড্রপসিনের মতো কি একটা এগিয়ে চলেছে শামুকের গতিতে। তাকে দিওয়ালির টুনি বাল্বের মতো করে চারিদিক সাজিয়ে দিয়েছে সাদা সাদা ঝিনুকের মালা। একটু কাছে আসতে বুজলাম ওটা ড্রপসিন নয়, দুম্বো দুম্বো বেশ কিছু বক্স যাকে ছবিতে মালা পড়ানোর মতো করে মাইকের চোঙ দিয়ে মালা পরানো হয়েছে। একটা ট্রাক্টর পুরো মাইক চোঙ আর বক্সে ঢাকা পরে গেছে আর গোঙানিটা কারখানার ধোঁয়ার মতো হুরহুর করে ওইখান থেকে বেরোচ্ছে। 


তার সামনেই নৃত্যরতা একদল ভোলানাথের চ্যালা-চ্যালি। কি যে একধরণের অদ্ভুত শব্দ বেরোয় আজকাল মাইকের ভিতর থেকে, মনে হয় বুকের ভিতরটা কে যেন শিল-নোড়ায় বাঁটছে। আহা, দু’হাত তুলে সে কি নেত্ত। বাবা যদি সামনাসামনি দেখতেন নিঘঘাত বাঘছাল খুলে যেত। দেবদাস সিনেমার ‘মার ডালা, মার ডালা’ গানে এমন নাচ হতে পারে জানলে দেবদাসের ডিরেক্টর সাহেব মাধুরী দীক্ষিত নয় ইশা কোপিকরকে দিয়ে চন্দ্রমুখী করাতেন। মুখ ফসকে নামটা বলে ফেলতেই নেত্তরতা মহিলা বললেন, “কিসের উপকার? উঁ?” ওনাকে ইশা কোপিকর বলেছি বলে পাশের নেত্তারতা এমন তাকালেন যেন স্বামীর পরস্ত্রীর উপর নজর পরেছে। আমি কাঁচুমাচু করে বললাম, ইয়ে মানে আপনিও মালাইকা অরোরা। “হতচ্ছাড়া, এই দামোদরে মাল কাঁকড়া কোথায় পাবো র‍্যা ?” আমি আর কথা বাড়ালুম না। এতক্ষণ খেয়ালই করি নি, সানি লিওনিও ছিলেন, তার দিকে তাকাতেই বোধহয় মনের কথা বুঝে নিজেই বললেন “সোয়ামি নেল নি, তাই তো যাচ্ছি বাবার মাথায় জল ঢালতে” 

ওফ ফো... এতক্ষণে মস্তিক জাগ্রত হল, কেন এত কোলাহল তবুও সিওর হবার জন্য এক হলুদ বাবুমশায়কে জিজ্ঞেস করলুম, আজ এত ভিড় কেন? যেন সংক্ষেপে নোটবদলের ফলাফল জানতে চেয়েছি এমন মুখ করে বললেন, “আজ ছাবনের ছেচ ছোমবার” উরিশ্লা! ছ’য়ের এমন অনুপ্রাস জম্মে শুনিনি। 

যাই হোক আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হলনা। তবে বুঝতে পারলাম সবকটা দলেরই একজন করে সর্দার আছে, মানে উদ্যোক্তা আর কি! আমাদের গ্রামের দেড়ফুটিয়া শিবলিঙ্গকে জলে চোবানোর দায়িত্ব নিয়েছে বাপি। দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলুম, হ্যাঁ রে, উত্তরবঙ্গ ভেসে দক্ষিণবঙ্গে চলে এল, তার মাঝে তোরা আবার এসবের আয়োজন করেছিস! এবার দক্ষিণবঙ্গ ভেসে কোথায় যায় বল দেখি!  ভারি তো একটা দেড়ফুটিয়া শিবলিঙ্গ, তার পনের ফুটের মন্দিরে যত না আকন্দ থাকে তার থেকে বেশি থাকে ছাগলের ইয়ে। তবু যদি নবাবহাটের এক'শ আট মন্দির বা বর্ধমানের বুড়ো শিব হতো কতই না কি করতিস! 

না মানে কথা গুলো গলার কাছে আটকে গেছে। বেরোয় নি। সামনে এত ভিড় পালাবার রাস্তা পেতাম না। সকালে অফিস যাওয়া প্রাণটা বেঘোরে শিবের বাঁকের চাবকানিতে চলে যেত। সামনে যে দলটা রয়েছে তারও একজন সর্দার আছে। মানে তাকেই আমার সর্দার মনে হয়েছিল আর কি, কেন হয়েছিল জানি না। বললুম, কাকা, একটু যাবার মতো রাস্তা করে দাও। আমার দিকে এমন করে তাকালো যেন আমি দাউদ ইব্রাহিমকে ধরে দিতে বলেছি। বুঝলাম এনাকে বলে কাজ হবে না। দল থেকে একটু পিছিয়ে পরা একজন নিজেকে টাইগার শ্রফ ভেবে জামার বুক খুলে হাঁটছেন। কাছে গিয়ে দেখলাম পাটকাটির উপর কে যেন হলুদ মাখিয়ে দিয়েছে। তবুও সাহস করে বললাম, কাকা একটু রাস্তা...... ঘোর লাগা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে একটা কেস্ট মুখুজ্জে স্টাইলের হাসি দিয়ে বলল, হঘিয়ে রাআআআস্তা! এক্ষুণি করে দিচ্ছি। বলেই আমার ডানপাশে দাঁড়িয়ে কোমর বেঁকিয়ে একটু সামনের দিকে ঝুঁকে অদ্ভুত এক স্টাইলে ডান হাতটা সামনে বাড়িয়ে একবার বাঁদিক ঝেঁটিয়ে দিল, আবার হাত উল্টো করে ডানদিক ঝেঁটিয়ে দিল। আমার মনে হল যেন হালুইকর তার কাঠের তাড়ু দিয়ে মিষ্টির ভিয়েন মারছে। “যাও বাবু, রাস্তা সাফ – চলে যাও”। রাস্তা সাফের কিছুই বুঝলাম না। যেটা বুঝলাম, ইয়ে অ্যায়সা ব্যায়সা দম নেহি... ইয়ে গাঁজা কা দম হ্যায়... এনারা সাদা ধোঁয়াতেও নীলকণ্ঠ ভোলানাথ দেখতে পান... আমি তো সামান্য রাস্তা দেখতে চেয়েছি।

মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

স্বীকারোক্তি বাকি আছে আলোচক চিন্ময়ী দাস

চিন্ময়ী দাস
শিক্ষিকা
বর্ধমান 
এই শীত কোনো ঋতু নয় 


কাব্যগ্রন্থ -     স্বীকারোক্তি বাকি আছে
কবি -        সন্দীপ কুমার মণ্ডল 
প্রকাশক -    বার্ণিক প্রকাশন
প্রকাশকাল -  বর্ধমান লিটিল ম্যাগাজিন মেলা ২০১৮

     দৈনন্দিন জীবন অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির সংঘাতে শব্দের সুনিপুন কৌশলে যে কাব্য কবি সন্দীপ কুমার মণ্ডল রচনা করেছেন তাঁর কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব ও বিষণ্ণতার সুর। যদিও এসব থেকে উত্তরণের দিশাও দেখিয়েছেন কবি। জীবনের নানা উত্থান- পতন, আশা- আশাভঙ্গের সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের মন সর্বদাই নির্জনতা পিয়াসি। আর সেই কারনেই কবি নদী কেই সহমর্মী  বলে মনে করেছেন। কবি তাই বন্যা প্রেমিক। এই বন্যা নির্জনতার আর এক নাম। এই বন্যা আমার ভিতরের আর এক আমি।

     আদ্যপান্ত বিরহাছন্ন কবি নিজেকেই প্রশ্ন করেছেন- ‘আমি কি বিরহ বিলাসী ?’ কবির কলম রোমন্থন করেছে প্রেমের আবছা স্মৃতি।  গদ্য ছন্দে ভর করে কবি পঙ্‌তির পর পঙ্‌তিতে সাজিয়ে দিয়েছেন স্বপ্ন, ভালোবাসা, যন্ত্রনা, আবেগ। পর পর স্থিরচিত্র গুলি সাজিয়ে গড়ে তুলেছেন সমগ্র নির্মান। বন্যা, শীত আর মেঘের রূপক রয়েছে একাধিক কবিতায়। প্রতিটি কবিতার মধ্যে রয়েছে এক ধরনের মন কেমন করা বিষাদ- ‘আমারও কিছু চিরকুট ছিল, সে কথা থাক না হয়, যেভাবে বইয়ের ভাঁজে থেকে যায় পুরানো গোলাপ, যে ভাবে আস্তিনের ভাঁজে অভিমান।’ স্বাভাবিক গদ্যের আশ্রয় সহজেই পাঠককে একাত্ম করেছে – ‘একটা ভুল মানুষ কে জীবন থেকে পিছিয়ে দেয় কয়েক ক্রোশ। আমি তো আদ্যপান্ত ভুলে ভরা একটা মানুষ।” অথবা, “উড়তে দিলাম বলেই কি উড়তে দিতে পারি বন্ধনহীন। নিয়ম করে চোখ রাখি তার উড়ানে।’

     আমরা আমাদের জীবনের দুঃখ কষ্টের ক্ষত গুলো ঢেকে রাখি রঙিন মোড়কে। বেঁচে থাকাটাই বড়ো কথা কি ভাবে বাঁচছি বা কেন বেঁচে আছি সেটা নয়। জীবন বোধ থেকে উঠে  আসা লাইন গুলি তাই সহজেই পাঠককে আকৃষ্ট করে। যেমন- ‘কতদিন নিজিকে জড়িয়ে কাঁদিনি। কতদিন আয়নার সামনে না কামানো দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে নিজিকে জিঙ্গেস করিনি আমি ঠিক কি চাই।’ অথবা ‘স্মৃতি বড়ো বহুরূপী। এক পশলা বৃষ্টি পেলে রঙ বদলে ভুলে যায় তিন মাস পুড়েছে উঠোন। নেশা মাঘে সোঁদা গন্ধে, দুটো পলাশ দেখলে ভুলে যায় সদ্য পেরিয়ে এসেছে শীত।’ শীত ঋতুর রূপকে রচিত কবিতা গুলিতে জড়িয়ে আছে একাকীত্ব ও বিষন্নতা। শীতের অনুষঙ্গ দেখি বার বার। এই শীত কোন ঋতু নয়, নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব ও বিষান্নতা রূপ যা সমগ্র বইটিতে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
মৃত্যু সম্পর্কে কবির ধারনাটাও বেশ অন্য রকম-
‘ মৃত্যু যন্ত্রণা নাকি বাঁধন ছেঁড়ার উল্লাস
............................................................
প্রতিটি মৃত্যুই আসলে এপিটাফের অজুহাত।’

আবার এই কবি ভীষন ভাবে আশাবাদী। তাই –‘আমি শুধু একটা মোহনা প্রতীক্ষায় বসে থাকি। একদিন ঠিক পেরিয়ে যাব এই রাত পোহানোর প্রহর।’
নির্লিপ্ততা কবির অপর এক গুণ যা কবিকে আবেগ সংযমে সাহায্য করেছে। কবির হৃদয় মথিত উচ্চারণ –‘ফিরে আসা আসলে হৃদয়ের কাঙালপনাকে পাবলিক করে দেয়। রাগ সঞ্চয় করা শিল্প যে শুধু সততাই জানে।’ যা পাঠককেও সংযমী হবার শিক্ষা দেয়।

শৈলী ও অনুভূতির গভীর সংমিশ্রণ তাঁর কবিতার প্রান। সহজসরলতা, মননশীলতার সঙ্গে কবির অনুভব কবিতা গুলোকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। এক অনিবার্য বিরহকে মনে মনে লালন করেছেন কবি এবং  তা ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রতিটি কবিতায়। প্রতি মুহুর্তের ব্যর্থতা থেকে তৈরী হওয়া ক্রোধ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কাব্যিক ভাষায় – ‘বিষোদগারণ আসলে একটা ক্ষয়, নির্বিষতারদিকে এগিয়ে যাওয়া; বিষোদগারণ আসলে একটা অহংকার।’ এক্ষেত্রে শীতঘুমকেই জড়িয়ে ধরতে বলেছেন প্রমাস্পদের মতো। তাঁর ভাবনা পাঠককে আকৃষ্ট করে সহজেই। দৈনন্দিন নিরীক্ষণ, নস্টালজিয়া আর হৃদয়ানুভূতিকে তিনি শব্দের মোড়কে সাজিয়েছেন। তবে শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে তিনি সহজ বাংলা ভাষার সঙ্গে বিদেশী ভাষার সমাবেশ ঘটিয়েছেন। সব কবিতাই বিষণ্ণতার সুর। বেশীর ভাগ কবিতাই শেষ হয়েছে ডট ডট ডট এ। অর্থাৎ কবিতার প্রবাহকে তিনি থামিয়ে দিতে চাননি। আর এভাবেই কবিতার লাইন গুলি খুব সহজেই পাঠকের হৃদকথা হয়ে উঠেছে।